মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ৪ জুলাই যুক্তরাজ্যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচনি ইস্যুসহ নানা কারণে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এবারের নির্বাচন। ভোটের ময়দানে লড়তে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীরা এখন প্রচারে ব্যস্ত। এরই মধ্যে আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে জনমত জরিপে উঠে এসেছে বিভিন্ন ট্রেন্ড।
যুক্তরাজ্য ৬৫০টা নির্বাচনী কেন্দ্র বা এলাকায় বিভক্ত। এই প্রত্যেক নির্বাচনী এলাকার ভোটাররা একজন সংসদ সদস্য নির্বাচন করেন যারা তাদের হয়ে ‘হাউস অফ কমন্স’ এ প্রতিনিধিত্ব করেন। নির্বাচনি ময়দানে লড়াই করতে নামা প্রার্থীদের মধ্যে অধিকাংশ কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি। তবে কেউ কেউ আবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও ভোটে লড়ছেন।
এ নির্বাচনে লড়ছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ৬ নারী। বিরোধী দল লেবার পার্টির মনোনয়নে নির্বাচনে লড়ছেন তারা। তাদের মধ্যে বর্তমানে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নি¤œকক্ষ হাউস অব কমন্সের সদস্য রুশনারা আলী, টিউলিপ সিদ্দিক, রুপা হক ও আফসানা বেগম রয়েছেন। তাদের সঙ্গে এবার প্রার্থী হয়েছেন রুমী চৌধুরী ও রুফিয়া আশরাফ।
এবার বিরোধী দল লেবার পার্টির জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এরই মধ্যে সব জনমত জরিপে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির থেকে ২০ পয়েন্ট এগিয়ে আছে লেবার পার্টি। বড় কোনো অঘটন না ঘটলে ১৫ বছর পরে যুক্তরাজ্যে সরকার গঠন করবে লেবার পার্টি।
দলটি ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই নারীদের মধ্যে কেউ হয়তো মন্ত্রিসভায় স্থান পেতে পারেন। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যে ৬ নারী নির্বাচনে লড়ছেন তারা হলেন-
টিউলিপ সিদ্দিক
টানা তিনবারের এমপি টিউলিপ সিদ্দিক। লেবার পার্টির মনোনয়নে ২০১৫ সালে লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসন থেকে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে শেখ রেহানার মেয়ে। ২০১৬ সাল থেকে তিনি ছায়া শিক্ষামন্ত্রী, সর্বদলীয় পার্লামেন্টারি গ্রæপের ভাইস চেয়ার, নারী ও সমতা নির্বাচন কমিটির সদস্য- এমন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন আসছেন।
রুপা আশা হক
২০১৫ সালে লেবার পার্টির মনোনয়নে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন রুপা আশা হক। এরপর টানা তিনবার তিনি পশ্চিম লন্ডনের ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটন আসনে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। লেবার পার্টির ছায়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান ২০১৬ সালে। সর্বদলীয় সংসদীয় মিউজিক গ্রæপের ভাইস চেয়ার এবং ক্রসরেলের সর্বদলীয় সংসদীয় পদে নিযুক্ত করা হয়েছিল তাঁকে।
রুশনারা আলী
বিট্রিশ পার্লামেন্টের প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপি রুশনারা আলী। লন্ডনের বাংলাদেশি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটসের বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসনে ২০১০ সাল থেকে টানা চারবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। ২০১০ থেকে আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক ছায়ামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন রুশনারা আলী। এরপর তিনি ২০১৩ সালের অক্টোবরে ছায়া শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হন। রুশনারা আলীর জন্ম সিলেটে। বয়স যখন সাত বছর, তখন যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমায় তার পরিবার। তিনি অক্সফোর্ডের সেন্ট জনস কলেজ থেকে দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতিতে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন।
আফসানা বেগম
পূর্ব লন্ডনের বাংলাদেশি–অধ্যুষিত পপলার অ্যান্ড লাইমহাউস আসন থেকে লেবার পার্টির মনোনয়নে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন আফসানা বেগম। এই আসন থেকেই প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন তাঁর সাবেক স্বামী এহতেশামুল হক। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে সোচ্চার ভ‚মিকা পালন এবং গাজায় যুদ্ধবিরতির পক্ষে ভোট দিয়ে ব্যাপক আলোচনায় আসেন এমপি আফসানা বেগম। আফসানার জন্ম ও বেড়ে ওঠা টাওয়ার হ্যামলেটসেই। বাংলাদেশে তাঁর আদি বাড়ি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে।
রুমী চৌধুরী
প্রথমবারের মতো এবার পার্লামেন্ট নির্বাচনে লেবার পার্টির মনোনয়ন নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন রুমী চৌধুরী। ২০২৩ সালে লুটন কাউন্সিল থেকে প্রথমবারের মতো কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। তার প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী কনজারভেটিভ পার্টির নেতা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল। ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ায় তার জয়ের সম্ভাবনা বেশি।
রুফিয়া আশরাফ
নর্থাম্পটন টাউন কাউন্সিলের মেয়র ও কাউন্সিলর রুফিয়া আশরাফ প্রথম লেবার পার্টির মনোনয়নে সাউথ নর্থাম্পটন আসন থেকে প্রার্থী হয়েছেন। আসনটি দীর্ঘদিন ধরে কনজারভেটিভ পার্টির দখলে। এবার এ আসনটিতে তিনি জিততে পারেন।
এবার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নয়জন নারীসহ ৩৪ জন প্রার্থী সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করছেন। তাদের মধ্যে লেবার পার্টি থেকে মনোনয়ন পাওয়া এই ছয়জন নারী এমপি হওয়ার দৌড়ে অনেকটা এগিয়ে রয়েছেন।
বিট্রিশ এমপি হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে ৬ বাঙালি নারী, হতে পারেন মন্ত্রীও
Leave a comment