হোসনেআরা চৌধুরী
নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনের আগে আবারও আলোচনায় উঠলেন অ্যাসেম্বলিম্যান ও প্রার্থী জোহারান মামদানি (তড়যৎধহ গধসফধহর)। ৯/১১ হামলার পর মুসলিম সম্প্রদায়ের ভয়ের কথা বলতে গিয়ে তিনি সম্প্রতি এক সভায় উল্লেখ করেছিলেন তাঁর এক *‘হিজাব পরা আন্টি’*র গল্প— যিনি নাকি ওই সময় ভয়ে গণপরিবহনে উঠতে চাননি।
এই মানবিক অভিজ্ঞতার গল্পে সহানুভূতি জাগলেও, নিউ ইয়র্ক পোস্ট-এর সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে প্রকাশ পেয়েছে, ওই নারী আসলে মামদানির বাবার দ্বিতীয় কাজিন (ংবপড়হফ পড়ঁংরহ) — অর্থাৎ তিনি ঘনিষ্ঠ আত্মীয় হলেও প্রচলিত অর্থে ‘আন্টি’ নন।
নতুন প্রশ্ন, পুরনো গল্প: ঘটনাটি সামনে আসতেই সামাজিক মাধ্যমে শুরু হয় ব্যাপক বিতর্ক। অনেকে বলছেন, মামদানি হয়তো ভোটারদের সহানুভূতি অর্জনের জন্য পারিবারিক সম্পর্ককে অন্যভাবে উপস্থাপন করেছেন। রিপাবলিকান নেতা জেডি ভ্যান্স (ঔউ ঠধহপব) মন্তব্য করেন,
“৯/১১-এর প্রকৃত ভুক্তভোগীদের পাশে না থেকে মামদানি নিজের ‘আন্টিকে’ গল্পের কেন্দ্রবিন্দু বানিয়েছেন। এটা রাজনৈতিক নাটক ছাড়া কিছু নয়।”
মামদানির ব্যাখ্যা: তবে মামদানি নিজের বক্তব্যে অনড়। তিনি জানান—
“আমি যে ব্যক্তির কথা বলেছি, তিনি আমার বাবার কাজিন জেহরা ফুহি (তবযৎধ ঋঁযর)। আমি ছোটবেলা থেকেই তাঁকে ‘আন্টি’ বলতাম। আমাদের সংস্কৃতিতে বড় বোন বা আত্মীয়কেও অনেক সময় সেইভাবে সম্বোধন করা হয়। উনি কয়েক বছর আগে প্রয়াত হয়েছেন।”
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া: ঘটনার পর প্রতিদ্বন্দ্বীরা এই বক্তব্যকে নির্বাচনী কৌশল হিসেবে চিহ্নিত করছেন, অন্যদিকে সমর্থকেরা বলছেন, মামদানির বক্তব্য ছিল মুসলিম আমেরিকানদের বাস্তব ভয় এবং পরিচয়ের সংকটের প্রতিফলন।
মামদানি অতীতেও ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তিনি আগেই বলেছিলেন—
“আমি মুসলিম, আমি আফ্রিকান, আমি নিউ ইয়র্কার — এই তিন পরিচয় লুকিয়ে রাখব না। আমি আলোয় দাঁড়িয়ে বলব, এটাই আমি।”
বৃহত্তর প্রেক্ষাপট: এই ঘটনাকে ঘিরে রাজনৈতিক ও সামাজিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, এটি কেবল একটি পরিবারের গল্প নয়; বরং আমেরিকার মুসলিম সম্প্রদায়ের দীর্ঘদিনের ভয়ের প্রতিধ্বনি। তবে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও রাজনৈতিক বক্তব্যের সীমারেখা কোথায় টানা উচিত, সেটিই এখন আলোচনার মূল প্রশ্ন।
সমাপনী মন্তব্য: জোহারান মামদানির “আন্টি” বিতর্ক দেখিয়ে দিয়েছে— রাজনীতিতে একটি গল্প যেমন সহানুভূতির প্রতীক হতে পারে, তেমনি সত্য যাচাইয়ের আগুনেও পুড়তে পারে। এখন দেখার বিষয়, এই বিতর্ক তাঁর নির্বাচনী অবস্থানকে দুর্বল করে, না কি আরও দৃঢ়ভাবে মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে তাঁকে সংযুক্ত করে।




