বিশ্বের প্রথম কঠোরতম অনলাইনুনিরাপত্তা আইন কার্যকর । লক্ষাধিক কিশোরের অ্যাকাউন্ট বন্ধ
হোসনেআরা চৌধুরী
ডিসেম্বর ৯, ২০২৫: বিশ্বের নজর কাড়তে চলা এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপে অস্ট্রেলিয়া আজ থেকে কার্যকর করেছে নতুন সোশ্যাল মিডিয়া বয়স-সীমা আইন, যা ১৬ বছরের নিচে সবাইকে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের বাইরে রাখবে। সরকার বলছে—এটি শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য, গোপনীয়তা ও অনলাইন নিরাপত্তা রক্ষার স্বার্থে বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক ও কড়া বিধান।
আইন কার্যকর হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই Meta,
Tik Tok, Snapchat, YouTube সহ প্রধান প্ল্যাটফর্মগুলো অস্ট্রেলিয়ার শত-শত হাজার কিশোরের অ্যাকাউন্ট নিষিক্রয় করতে শুরু করে। অনেকে সকালে লগইন করতে গিয়ে দেখতে পেয়েছে- “Your account is disabled due to age restrictions”
কী আছে নতুন আইনে? মূল বিধানসমূহ
Online Safety Amendment (Social Media Minimum Age) Act 2024-এর আভ্যতায়:
১৬ বছরের নিচে কেউ সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাকাউন্ট খুলতে না চালাতে পারবে না চালু করতে হবে।
প্ল্যাটফর্মগুলোকে বাধ্যতামূলক বয়স যাচাই বাবস্থা নিয়ম ভাঙলে সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলোকে
সর্বোচ্চ অঃ৪১.৫ মিলিয়ন (প্রায় USD 33M) জরিমানা বিদ্যমান অ্যাকাউন্ট শনাক্ত করে অবিলম্বে বন্ধ করার নির্দেশ।
“Age-restricted platforms” হিসেবে তালিকাভুক্ত Tik Tok, Instagram, Facebook, Snapchat, YouTube, X, Reddit, Twitch, Threads ইতাদি
সরকার এটিকে গণছে “কিশোরদের অনলাইন ক্ষতি কমানোর একটি রূপান্তরমূলক সিদ্ধান্ত।”
কেন এই আইন? সরকারের ব্যাখ্যা
অস্ট্রেলিয়ার যোগাযোগ ও অনলাইন-নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ের মতে
গত কয়েক বছরে কিশোরদের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়া। সম্পর্কিত।
বিষগণতা,
সাইবারবুলিং,
উদ্বেগ,
ঘুমের ব্যাঘাত,
অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
সরকার মনে করছে অল্প বয়সে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশ, আত্মবিশ্বাস ও সামাজিক আচরণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
পাশাপাশি, আপত্তিকর কনটেন্ট ও অ্যালগরিদমিক আসক্তি শিশুদের জন্য বড় ঝুঁকি।
সরকারি ভাষ্য-
“১৬ বছরের আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রবেশ বিলম্বিত করা বিশ্বব্যাপী শিশু-নিরাপত্তার নতুন মানদণ্ড হয়ে দাঁড়াবে।”
প্রতিক্রিয়া: দেশে মিশ্র সাড়া, অভিভাবকদের মধ্যে স্বস্তি অনেক অভিভাবক সিদ্ধান্তটিকে অভ্যর্থনা জানিয়ে
“যেখানে সন্তান ঘুমানোর আগেও Tik Tok বা Instagram স্কুল করছিল, সেখানে আইনটা বড়
সরকার মনে করছে—অল্প বয়সে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশ, আত্মবিশ্বাস ও সামাজিক আচরণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
পাশাপাশি, আপত্তিকর কনটেন্ট ও অ্যালগরিদমিক আসক্তি—শিশুদের জন্য বড় ঝুঁকি।
সরকারি ভাষ্য—
“১৬ বছরের আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রবেশ বিলম্বিত করা—বিশ্বব্যাপী শিশু-নিরাপত্তার নতুন মানদণ্ড হয়ে দাঁড়াবে।”
প্রতিক্রিয়া: দেশে মিশ্র সাড়া, অভিভাবকদের মধ্যে স্বস্তি
অনেক অভিভাবক সিদ্ধান্তটিকে অভ্যর্থনা জানিয়ে বলেছেন—
“যেখানে সন্তান ঘুমানোর আগেও ঞরশঞড়শ বা ওহংঃধমৎধস স্ক্রল করছিল, সেখানে আইনটা বড় রকমের স্বস্তি।”
কিশোরদের মধ্যে হতাশা
অন্যদিকে অনেক কিশোর অভিযোগ করছে—
“বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ, স্কুল নিউজ, কাজের নোটিশ—সবকিছুই সোশ্যাল মিডিয়ায় হয়। একধাক্কায় সব বন্ধ!”
বিশেষ করে গ্রামীণ ও দূরবর্তী অঞ্চলে—যেখানে ডিজিটাল যোগাযোগই প্রধান ভরসা—সেখানে কিশোররা বলছে, তারা আগের চেয়ে আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে।
সমালোচনা: স্বাধীনতা ও বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন
ডিজিটাল অধিকার সংগঠনগুলো বলছে—
একক বয়সসীমা সব শিশুর জন্য বাস্তবসম্মত নয়
অনেক কিশোর শিক্ষা, কমিউনিটি ও সাংস্কৃতিক সংযোগের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার উপর নির্ভর করে
কঠোর নিষেধাজ্ঞা তাদের অরক্ষিত প্ল্যাটফর্মে পালিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়
বয়স যাচাই ব্যবস্থা ব্যবহারকারীর গোপনীয়তাকে আরও বিপদের মুখে ফেলতে পারে
কিছু সমালোচক মন্তব্য করেন—
“এটি শিশুদের সুরক্ষার বাইরেও ব্যক্তিগত স্বাধীনতার উপর অতি-হস্তক্ষেপ।”
সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলোর অবস্থান
প্রধান সামাজিক মাধ্যম কোম্পানিগুলো জানিয়েছে—
যদিও তারা শিশু-নিরাপত্তাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়, কিন্তু এই আইন বাস্তবায়নে প্রযুক্তিগত, গোপনীয়তা-সংক্রান্ত ও নীতি-সংক্রান্ত জটিলতা রয়েছে।
তারা উদ্বেগ জানিয়েছে—
বয়স শনাক্তকরণ প্রযুক্তি অনেক সময় নির্ভুল নয়
শিশুদের তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে গোপনীয়তার সমস্যা তৈরি হয়
ব্যবহারকারীর স্বাধীনতা ও অতিরিক্ত নজরদারির বিতর্ক দেখা দিতে পারে
তবে তারা আইন মেনে চলতে ধাপে ধাপে ব্যবস্থা নিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ
সাইবার মনোবিজ্ঞানী ও নিরাপত্তা গবেষকদের মতে—
সামাজিক মাধ্যম বিলম্বিত করলে কিছু ক্ষতিকর প্রভাব কমতে পারে
কিন্তু “পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা” সবসময় কাজ করে না
অনেক কিশোর ঠচঘ, বিকল্প অ্যাপ, নকল বয়স ব্যবহার করে আইন এড়িয়ে যেতে পারে
বাস্তব শিক্ষাদান, ডিজিটাল লিটারেসি ও পারিবারিক তদারকি—আইনের চেয়েও কার্যকর
এক বিশেষজ্ঞ বলেন—
“শিশুদের যন্ত্র থেকে দূরে রাখার চেয়ে তাদের সঠিকভাবে ব্যবহার শেখানো অনেক বেশি কার্যকর।”
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: নজর এখন অস্ট্রেলিয়ায়
এই আইন কার্যকর হওয়ার পরই যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের কয়েকটি দেশ অনুরূপ নীতি বিবেচনা শুরু করেছে। অনেক দেশ বলছে— “অস্ট্রেলিয়ার মডেল একটি নতুন গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করতে পারে।”
ডিজিটাল নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন—এই আইন সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলোর ওপর বিশ্বব্যাপী বয়স যাচাই এবং শিশু-নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্ত করার চাপ বাড়াবে।
উপসংহার
অস্ট্রেলিয়ার এই নতুন আইন কেবল দেশটির অনলাইন পরিসরকেই বদলে দিচ্ছে না—এটি হয়ে উঠছে বৈশ্বিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু।
সমর্থকদের মতে এটি সময়ের দাবি—শিশুদের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।
আবার সমালোচকদের মতে, এটি বাস্তবতা বিবর্জিত এবং স্বাধীনতা সীমিত করার ঝুঁকি রাখে।
তবে একথা নিশ্চিত—এই সিদ্ধান্ত বিশ্বজুড়ে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের ভবিষ্যৎ নীতি, নিরাপত্তা এবং নিয়ন্ত্রণ কাঠামোর উপর গভীর প্রভাব ফেলবে।




