হোসনেআরা চৌধুরী
নিউ ইয়র্ক । অক্টোবর ২৬, ২০২৫: নিউ ইয়র্ক সিটির আসন্ন মেয়র নির্বাচনে প্রগতিশীল প্রার্থী জোহরান মামদানি আবারও আলোচনার কেন্দ্রে। সম্প্রতি তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, নির্বাচিত হলে পুলিশ কমিশনার জেসিকা টিশ তাঁর নেতৃত্বে কাজ করবেন।
তাঁর স্পষ্ট ঘোষণা—
“আমি হবো মেয়র — এবং সবাই আমার নেতৃত্ব মেনে চলবে।”
এই বক্তব্যটি তিনি দিয়েছেন নিউ ইয়র্কভিত্তিক পডকাস্ট হেল গেট-এর এক আলোচিত পর্বে, যেখানে তাঁকে প্রশাসনিক সমন্বয় ও নীতিগত ভিন্নতা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। মামদানি বলেন, এখনো টিশের সঙ্গে তাঁর কোনো আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়নি, তবে তিনি আত্মবিশ্বাসী যে তাঁর প্রশাসনে কমিশনারসহ সবাই ন্যায়বিচার সংস্কারের নতুন দিকনির্দেশে একসঙ্গে কাজ করবেন।
অপরাধ ও ন্যায়বিচার সংস্কারের নতুন ভাবনা
জোহরান মামদানি দীর্ঘদিন ধরেই নিউ ইয়র্ক সিটির অপরাধ-ন্যায়বিচার ব্যবস্থার সংস্কারের পক্ষে সোচ্চার। তাঁর নির্বাচনী অঙ্গীকারে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে—
- পুলিশের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধি,
- অপরাধ প্রতিরোধে সামাজিক সেবা ও মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা বাড়ানো,
- এবং পুলিশের গ্যাং ডাটাবেস ও জামিন নীতি (বেইল রিফর্ম)-এর পুনর্মূল্যায়ন।
অন্যদিকে কমিশনার জেসিকা টিশ, যিনি দীর্ঘদিন ধরে কঠোর প্রশাসনিক অবস্থান ও প্রযুক্তিনির্ভর পুলিশিংয়ের পক্ষে, অতীতে এসব সংস্কারমূলক উদ্যোগের অনেকগুলোর বিরোধিতা করেছেন। ফলে, তাঁদের নীতি-দর্শনের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য স্পষ্ট।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও বিশ্লেষণ
রাজনৈতিক মহলে মামদানির এই বক্তব্যকে একদিকে তাঁর নেতৃত্বের আত্মবিশ্বাস, অন্যদিকে সম্ভাব্য প্রশাসনিক দ্বন্দ্বের ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এর আগে নিউ ইয়র্কের ইতিহাসে যেমন মেয়র বিল ডি ব্লাসিও এবং কমিশনার বিল ব্র্যাটন-এর মধ্যে নীতিগত টানাপোড়েন দেখা গিয়েছিল, মামদানি-টিশ যুগেও তেমন কিছু ঘটতে পারে।
তবে মামদানির অবস্থান আলাদা। তিনি প্রশাসনকে রদবদল নয়, বরং পুনর্গঠন হিসেবে দেখছেন — যেখানে পুলিশ, সম্প্রদায় এবং নাগরিক সমাজ একত্রে অংশ নেবে শহরের নিরাপত্তা ও মানবিকতার ভারসাম্য রক্ষায়।
নেতৃত্ব না দ্বন্দ্ব — কোন পথে যাবে প্রশাসন?
মামদানির এই ঘোষণা একধরনের রাজনৈতিক কৌশলের ইঙ্গিত দেয়।
একদিকে তিনি নিজেকে উপস্থাপন করছেন সংস্কারপন্থী নেতা হিসেবে— ন্যায়, মানবিকতা ও সামাজিক ন্যায্যতার পক্ষে।
অন্যদিকে, মধ্যপন্থী ভোটারদেরও আশ্বস্ত করছেন যে তিনি পুলিশ বিভাগকে পাশ কাটিয়ে নয়, বরং নেতৃত্বের কাঠামোর ভেতরে রেখে কাজ করতে চান।
কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায় —
যিনি প্রযুক্তিনির্ভর কঠোর প্রশাসনের প্রতীক, সেই জেসিকা টিশ কি সত্যিই মামদানির মানবিক ও সংস্কারধর্মী দর্শনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারবেন?
নিউ ইয়র্কের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশ
- এই বিতর্ক কেবল ব্যক্তিগত নয় — এটি পুরো নিউ ইয়র্ক সিটির ভবিষ্যৎ নির্ধারণে ভূমিকা রাখতে পারে।
- একদিকে শহরের বাসিন্দারা চান নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার নিশ্চয়তা, অন্যদিকে তাঁরা খুঁজছেন ন্যায়ভিত্তিক ও সহমর্মিতাপূর্ণ প্রশাসন।
- এই দুই প্রান্তের মাঝখানে দাঁড়িয়ে জোহরান মামদানির নেতৃত্ব কীভাবে ভারসাম্য রক্ষা করে — সেটাই এখন দেখার বিষয়।
উপসংহার
জোহরান মামদানির উচ্চারণ,
“আমি হবো মেয়র, সবাই আমার নেতৃত্ব মেনে চলবে”,
একদিকে তাঁর আত্মবিশ্বাসের প্রকাশ, অন্যদিকে নিউ ইয়র্ক সিটির রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে।
তবে সেই নেতৃত্ব কতটা কার্যকর হবে — তা নির্ভর করবে তিনি কীভাবে ভিন্ন আদর্শের মানুষদের এক ছাতার নিচে এনে শহরের মানবিক পুনর্গঠনের পথে এগিয়ে নিতে পারেন।
সূত্র:নিউ ইয়র্ক পোস্ট




