পানামার ছোট দ্বীপ গার্দি সুগদুব। এখানে বসবাস করে প্রায় ৩০০ পরিবার। তবে এ মুহূর্তে তারা নিজেদের জিনিসপত্র গুছিয়ে দ্বীপ ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আগামী সপ্তাহেই নতুন আশ্রয়ের সন্ধানে যাত্রা করবে তারা। এ দ্বীপের বাসিন্দারাই হতে যাচ্ছে আমেরিকার প্রথম জলবায়ু শরণার্থী। কয়েক প্রজন্ম ধরে ওই দ্বীপে বসবাস করা বাসিন্দাদের এ সিদ্ধান্ত কোনো রাজনৈতিক কারণে নয়। মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের ফলে ধীরে ধীরে তলিয়ে যাচ্ছে দ্বীপটি। তাই পুরোপুরি প্লাবিত হওয়ার আগেই দ্বীপ ছাড়ছে তারা। এপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বেচ্ছায় আবাসস্থল ছাড়ছে বাসিন্দারা। অবশ্য কিছু লোক এখনই দ্বীপ ছাড়ছে না বলে জানিয়েছেন পানামার আবাসনসংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা। তারা দ্বীপটি পুরোপুরি তলিয়ে যাওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে তারা থাকতে চাইলেও সরকার তাদের বাধা দেবে বলে জানান ওই কর্মকর্তা। পানামায় এ রকম দ্বীপ রয়েছে ৬৩টি। স্থানীয় কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, আগামী কয়েক দশকে সব দ্বীপই প্লাবিত হতে পারে। তবে গার্দি সুগদুবের বাসিন্দারাই হতে যাচ্ছে এর প্রথম শিকার।
গুনা ইয়ালা অঞ্চলের দ্বীপপুঞ্জের ৫০টি ঘনবসতিপূর্ণ দ্বীপের অন্যতম সুগদুব। ক্ষুদ্র এ দ্বীপের দৈর্ঘ্য মাত্র ৩৬৬ মিটার, প্রস্থ ১৩৭ মিটার। পাখির চোখে দ্বীপটি ছোট খেয়াঘাটের মতো মনে হতে পারে। প্রতি বছর বিশেষ করে নভেম্বর-ডিসেম্বরে যখন প্রবল সমুদ্রবায়ু বাহিত হয়, তখন দ্বীপের রাস্তাঘাট ডুবে যায়। এমনকি পানি ঢোকে ঘরবাড়িগুলোয়ও। শুধু সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে তাই নয়, মহাসাগরের উষ্ণতাও বাড়ছে। জন্ম নিচ্ছে বড় বড় ঝড়। গুনার স্বায়ত্তশাসিত সরকার দুই দশক আগে প্রথম দ্বীপটি
খালি করার চিন্তা করে। এতদিন সেটি কার্যকর না হলেও স¤প্রতি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে তাদের এখন দ্বীপ ছাড়তে হচ্ছে। সরকার তাদের জন্য ১২ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে একটি আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। সেখানেই উঠবে দ্বীপের বাসিন্দারা। দ্বীপের প্রবীণ বাসিন্দা ইভেলিও লোপেজ বলেন, ‘স¤প্রতি সমুদ্রের আবহাওয়া চরমভাবাপন্ন হয়ে উঠেছে। জোয়ার আগের চেয়ে বেশি শক্তিশালী, তাপমাত্রাও অসহনীয় পর্যায়ে। স্থানীয়রা বলছে, ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে দ্বীপটিতে বসবাস করার ফলে তাদের জীবিকার অভিজ্ঞতা সমুদ্রনির্ভর। এখন তারা স্থলে বসবাস করতে যাচ্ছে। ফলে সেখানকার জীবিকার ধরন নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে তারা। পানামার স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউশনের শারীরিক পর্যবেক্ষণ কর্মসূচির পরিচালক স্টিভেন প্যাটন বলেছেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি জলবায়ু পরিবর্তনের সরাসরি পরিণতি। পানামার দ্বীপগুলো সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে গড়ে আধা মিটার উঁচু। এর অর্থ আগামী কয়েক দশকে সব দ্বীপই সমুদ্রে প্লাবিত হবে। এমনকি বিশ্বের সব উপক‚ল একই পরিণতির দিকে যাচ্ছে।