জটিলতা নিরসনে দুই দফায় পৃথক ব্যবস্থা নিয়েছে ভিসা প্রক্রিয়াকরণের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠান ভিএফএস গ্লোবাল। ভিসা পেতে দীর্ঘ সময় ব্যয় হওয়ার কারণে নানা ধরনের জটিলতার মুখে পড়েছেন ইতালি যেতে ইচ্ছুক বাংলাদেশি কর্মীরা; ঠিক সময়ে যেতে না পারলে ইউরোপের দেশটিতে শ্রম বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়ার শঙ্কার কথাও বলছেন কেউ কেউ। জটিলতা নিরসনে দুই দফায় পৃথক ব্যবস্থা নিয়েছে ভিসা প্রক্রিয়াকরণের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠান ভিএফএস গ্লোবাল।
ইমেইলে ভিসা আবেদনের অ্যাপয়েন্টমেন্ট এবং আবেদন নিয়ে পাসপোর্ট ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে তারা। দেশজুড়ে কর্মী সংকট কাটাতে দুই বছর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশগুলো থেকে প্রায় ছয় লাখ কর্মী নেয়ার ঘোষণা দেয় ইতালি। এর ধারাবাহিকতায় পর্যায়ক্রমে কর্মী নিতে আবেদন করেন দেশটির বিভিন্ন খাতের মালিকরা। স্থানীয় প্রশাসনের যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শেষে সেসব কর্মীর জন্য ‘নুল্লা ওস্তা’ (ওয়ার্ক পারমিট) ইস্যু করা হলেও দীর্ঘ সময় ধরে তাদের পাসপোর্ট আটকে রাখছে বাংলাদেশে ইতালির দূতাবাস। বিষয়টি নিয়ে হতাশায় ভুগছেন ইতালিয়ান মালিক এবং বাংলাদেশি কর্মীরা।
গত বছরের মার্চে ইতালিতে যাওয়ার জন্য পরিচিত একজন ইতালি প্রবাসী আত্মীয়ের মাধ্যমে আবেদন করেন মালয়েশিয়া প্রবাসী হাসান মোহাম্মদ। গত বছরের অক্টোবরে ইতালি থেকে নুল্লা ওস্তা ইস্যু হলে নভেম্বরে দেশে এসে তিনি ইতালি দূতাবাসের ভিসা সেন্টার ভিএফএস গেøাবাল বরাবর ভিসার জন্য আবেদন করেন। হাসান বলেন, ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও তিনি ভিসা পাননি। একদিকে তার ইতালি গিয়ে ভাগ্য পরিবর্তনের আশা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে, অন্যদিকে ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় শেষ হতে যাচ্ছে মালয়েশিয়ার ভিসার মেয়াদ। এদিকে নির্ধারিত সময়ে কর্মী সংকটে নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারছেন না আবেদন করা ইতালীয় মালিকরা। ইতালির নাপোলি শহরের কৃষি জমির মালিক ভিভেন্সি মিকিয়েল জানান, গত দুই বছরে ১০ জনকে ওয়ার্ক পারমিট দিলেও এখনো কাউকে কাজে লাগাতে পারেননি। তিনি বলেন “এখানে আমার অনেক কৃষি জমি রয়েছে। যেহেতু কৃষি সেক্টরে বাংলাদেশি কর্মীরা খুব দক্ষতার সাথে কাজ করে, তাই আমি এখানে কর্মরত এক বাঙালি কর্মীর মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে আরো বাঙালি কর্মী আনার জন্য আবেদন করি। “প্রেফেত্তুরা (কাগজপত্র যাচাই-বাছাই অফিস) আমাকে ‘নুল্লা ওস্তা’ দিলে আমি বাংলাদেশে থাকা ইতালি দূতাবাসে ভিসার জন্য তাদের আবেদন করতে বলি। তারা আবেদন করলেও নানা জটিলতায় এখনো ভিসা পাননি।” এ নিয়ে বেশ কয়েকবার উকিলের মাধ্যমে বাংলাদেশে থাকা ইতালি দূতাবাসে মেইল করলেও তারা কোনো ‘সদুত্তর দেয়নি’ বলে জানান ভিভেন্সি। তিনি বলেন, “কর্মী সংকটে আমার জমির ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। পরিস্থিতি এরকম হলে স্থানীয় সরকারের কাছে আমার ক্ষতিপূরণ চাইতে হবে।
” ঢাকায় ইতালির রাষ্ট্রদূত আন্তোনিয়ো আলেসান্দ্রো বলছেন, ‘জাল নুল্লা ওস্তার’ মাধ্যমে অনেকে ভিসা আবেদন করায় আবেদন প্রক্রিয়াকরণে এত জটিলতা তৈরি হয়েছে। ভিসা পেতে দেরি হওয়ায় গত এপ্রিল মাসে ঢাকায় ইতালি দূতাবাসের সামনে মানববন্ধন করেন ভিসা আবেদনকারীরা। ‘হয় ভিসা দেওয়া হোক, না হয় জমাকৃত পাসপোর্ট ফেরত দেওয়া হোক’- এমন দাবি তারা মানববন্ধনে জানান। এসময় মানববন্ধনকারীদের মধ্য থেকে একটি প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রদূতের অনুমতি নিয়ে ভেতরে গিয়ে দীর্ঘ সময় আলোচনা করেন। পরে রাষ্ট্রদূত আন্তোনিয়ো আলেসান্দ্রোকে উদ্ধৃত করে প্রতিনিধি দলটি জানায়, প্রায় এক লাখের মত আবেদনকারীর পাসপোর্ট দূতাবাসে রয়েছে।
নুল্লাওস্তাসহ অন্যান্য কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করার সময় তারা অনেক ‘জাল নুল্লা ওস্তা’ পেয়েছে। মূলত এই জাল ও আসল নুল্লা ওস্তা বাছাই করতেই এত সময় লাগছে। এ বিষয়ে নাপোলিতে বসবাস করা মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট ইমাম হোসাইন রতন বলেন, “ইতালির ইমিগ্রেশন আইন অনুসারে দীর্ঘ সময় পাসপোর্ট আটকে রাখার নিয়ম নেই। এভাবে ভিসা প্রত্যাশীদের পাসপোর্ট আটকে রেখে দূতাবাস তার নিজ দেশের নিয়ম অমান্য করছেন। এর বিরুদ্ধে অবশ্যই বাংলাদেশ সরকারের জরুরি পদক্ষেপ নেয়া উচিত।” তিনি বলেন, সব ধরনের সাবঅরডিনেট ওয়ার্ক ভিসার আবেদনকারীদের পাসপোর্ট জমা দেওয়ার পর সমস্ত ডকুমেন্টস ঠিক থাকলে তিন মাসের মধ্যে ভিসা দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। সেইসাথে ব্যবসায়ীদের ১২০ দিন ও পারিবারিক ভিসা ৩০ দিনের মধ্যে দিতে হয়। “এভাবে পাসপোর্ট আটকে রাখায় ইতালির মালিকেরা বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এতে ভবিষ্যতে ইতালির শ্রমবাজার হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে।”