আদালত ও অফিসে হঠাৎ গ্রেফতার বন্ধে নতুন আইন-অভিবাসীবান্ধব নিউ ইয়র্কের ভবিষ্যৎ কি রক্ষা হবে?
শাহ্ জে. চৌধুরী
দীর্ঘদিন ধরে অভিবাসী-বান্ধব শহর হিসেবে পরিচিত-সাম্প্রতিক সময়ে এক অপ্রত্যাশিত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। আদালতে হাজিরা দিতে আসা বা রুটিন চেক-ইন করতে যাওয়া অভিবাসীদের হঠাৎ ICE (U.S. Immigration and Customs Enforcement) কর্তৃপক্ষ গ্রেফতার করছে, পরিবারের বিচ্ছিন্নতার হুমকি তৈরি হচ্ছে, শিশু ও ছাত্রছাত্রীর মানসিক চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সিটি কাউন্সিল, কংগ্রেস সদস্য ও অভিবাসী অধিকার সংস্থা একত্রিত হয়ে ঘোষণা করেছেন- “নিউ ইয়র্কে আদালত বা অফিসের দরজায় আর ICE গ্রেফতার করবে না।”
নতুন আইন প্রস্তাব পাস হলে, শহরের অভিবাসীরা আইন মানার সময় ভয়ে না থাকবেন এবং নিরাপদে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।
নিউ ইয়র্ক: অভিবাসীদের শহর, কেন আতঙ্ক বাড়ছে?
নিউ ইয়র্কে প্রায় ৬.৮ মিলিয়ন অভিবাসী বসবাস করেন-মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪০%।
এই জনগোষ্ঠী শহরের:
- রেস্তোরাঁ ও হোটেল শিল্প
- নির্মাণ ও শ্রম খাত
- স্বাস্থ্য ও কেয়ার সেবা
- ছোট ব্যবসা
- পরিবহন ও রাইড-শেয়ার
- অন্যান্য সেবাখাত সবক্ষেত্রেই অবদান রাখে।
কিন্তু সম্প্রতি ICE-এর হঠাৎ অভিযানগুলো অভিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে ভয় ও অনিশ্চয়তার সংস্কৃতি তৈরি করেছে।
প্রতিবেদনগুলো দেখাচ্ছে:
আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে গ্রেফতার
রুটিন চেক-ইনে আটক
স্কুল ও মেট্রো স্টেশনে পরিচয় যাচাই করে গ্রেফতার
পরিবারগুলো আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, এই কর্মকাণ্ড “আইন শৃঙ্খলার আড়ালে মানসিক আতঙ্ক সৃষ্টি করছে”, যা বিচারিক প্রক্রিয়ায় আস্থা ক্ষুণণ করছে।
নতুন আইন: কী কী থাকবে?
১. আদালতে হাজিরা নিরাপদ
যে কেউ আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন, তাদের গ্রেফতার করা যাবে না। এটি আইন লঙ্গন হিসেবে গণ্য হবে।
২. রুটিন চেক-ইন সুরক্ষিত অফিস বা চেক-ইন-এর সময় ICE এজেন্টদের হঠাৎ অভিযান চালানো যাবে না।
৩. অধিকার লঙ্ঘিত হলে মামলা করার সুযোগ
গ্রেফতার বা অভিযান যদি আইন লঙ্ঘন হয়, ক্ষতিগ্রস্তরা সরাসরি মামলা করতে পারবেন।
৪. অভিযান পূর্বেই অধিকার জানানো কোর্ট বা অফিসে প্রবেশের সময় পরিষ্কারভাবে জানানো হবে-আপনার অধিকার কী এবং কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নন।
৫. নিরাপদ অঞ্চল ঘোষণা
কিছু সরকারি স্থানে ওঈউ অভিযান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হবে।
আইনপ্রণেতাদের বক্তব্য কংগ্রেসম্যান ড্যান গোল্ডম্যান বলেন:
“যারা আইন মেনে কাজ করছে, তাদের হঠাৎ ধরা যাবে না। অনেকের কোনো অপরাধ নেই, তবু তারা গ্রেফতার হতে পারে।”
সিটি কাউন্সিলের অন্যান্য সদস্যদের বক্তব্য:
নিউ ইয়র্ক তার অভিবাসী সম্প্রদায়ের পাশে আছে।” “ভয় দেখিয়ে কাউকে আইনের বাইরে ঠেলা যাবে না। অভিবাসী অধিকার সংস্থাগুলো বলছে- “আইনটি শুধু গ্রেফতার বন্ধ করবে না, বরং মানুষের আদালত ও সরকারি অফিসে যাওয়ার আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনবে।”
আইনি ও বাস্তব চ্যালেঞ্জ
সিটি কাউন্সিলে পাস হলেও, ফেডারেল নীতি ICE-এর আচরণ পরিবর্তন নাও করতে পারে।
আইন কার্যকর করা কতটা কঠিন হবেড়এটি এখনও প্রশ্নবিদ্ধ।
সম্প্রদায়ের মধ্যে যে ভয় তৈরি হয়েছে, তা কাটতে সময় লাগবে।
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে:
“আইন পাস করা সহজ: বাস্তবায়নই আসল পরীক্ষা।”
মানবিক প্রভাব
পরিবারগুলো নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ জীবন পাবেন।
আদালত বা অফিসে যাওয়া নিরাপদ হবে।
শিশু ও শিক্ষার্থীরা অবাধভাবে শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে পারবে।
সম্প্রদায়ের মধ্যে আইন ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনা যাবে।
উপসংহার
নিউ ইয়র্কের এই আইনপ্রস্তাব শুধু গ্রেফতার রোধ নয়-এটি শহরের মানবিক মূল্যবোধ, সুরক্ষা ও অভিবাসীবান্ধব পরিচয় রক্ষার লড়াই।
যদি আইনটি সফলভাবে কার্যকর হয়:
অভিবাসীরা হঠাৎ গ্রেফতার থেকে মুক্তি পাবেন
আইনি অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে
অন্য শহরগুলির জন্য একটি মডেল তৈরি হবে
শহরের বার্তা স্পষ্ট হবে: “ভয় নয়, মানবিকতা-এটাই নিউ ইয়র্ক।




