যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প সোমবার আমেরিকার কলেজ ক্যাম্পাসগুলোতে ফিলিস্তিনিপন্থী বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে নতুন করে দমন অভিযান চালানোর অঙ্গীকার করেছেন। তিনি বলছেন, নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভে নেতৃত্বদানকারী মাহমুদ খলিলকে আটকের ঘটনাটি এরকম প্রথম গ্রেপ্তার এবং সামনে আরও গ্রেপ্তার হবে।
“আমরা জানি দেশ জুড়ে কলাম্বিয়া ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও শিক্ষার্থী রয়েছে যারা জঙ্গিপন্থি, ইহুদিবিদ্বেষী, ও আমেরিকা বিরোধী কার্যক্রমে জড়িয়েছে, এবং ট্রাম্প প্রশাসন এটা মেনে নেবে না”, ট্রুথ সোশাল প্ল্যাটফর্মে তিনি বলেন।
গত সপ্তাহান্তে খলিলকে গ্রেপ্তার করে আমেরিকান অভিবাসন কর্মকর্তারা। এক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী সংগঠন হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরোধিতা করে কলাম্বিয়া ও অন্য কয়েকটি ক্যাম্পাসে যে বিক্ষোভ শুরু হয়, তাতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি খলিল।
তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেই বিক্ষোভ স্তিমিত হয়ে পড়েছে এবং গত বছর নতুন স্কুল বর্ষের শুরুতে আর তা আর দেখা যায়নি।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দপ্তর বলছে “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ইহুদিবিদ্বেষ বিরোধী নির্বাহী আদেশের সমর্থনে এবং পররাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে” খলিলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ডিসট্রিক্ট কোর্টের বিচারক জেসি ফারম্যান সোমবার খলিলকে আপাতত তার দেশে ফেরত না পাঠানোর আদেশ দিয়েছে এবং বুধবার এই মামলার শুনানির দিন ধার্য করেছে।
ডিটেনশন নথিতে খলিলকে একজন সিরিয় বলে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তিনি কলাম্বিয়া স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স থেকে গত সেমিস্টারে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন। স্টুডেন্ট ওয়ার্কার্স অব কলাম্বিয়া ইউনিয়নের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গ্রেপ্তারের সময় খলিল যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী গ্রিন কার্ডের অধিকারী ছিলেন এবং একইসঙ্গে তিনি আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক আমেরিকার নারীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ।
তার বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি অভিযোগ আনা হয়নি।
ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমের পোস্টে বলেন, “আপনি যদি জঙ্গিবাদকে সমর্থন করেন, যার মধ্যে নিরীহ পুরুষ, নারী ও শিশুকে হত্যা করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত, তাহলে আপনার উপস্থিতি আমাদের জাতীয় ও পররাষ্ট্রনীতির স্বার্থ পরিপন্থী এবং আপনাকে আমরা এই দেশে স্বাগত জানাতে পারছি না। আমাদের প্রত্যাশা, আমেরিকার প্রতিটি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় এ বিষয়টি মেনে চলবে।”
ক্যাম্পাসের বিক্ষোভে ইহুদিবিদ্বেষ রয়েছে, এমন অভিযোগ আছে। এই বিক্ষোভগুলোর—কয়েকটি সহিংস হয়ে ওঠে এবং শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের ভবনের দখল নেয় ও ক্লাসে বাধার সৃষ্টি করে—এতে ইসরায়েলের কার্যক্রমের বিরোধিতাকারী শিক্ষার্থীদের ইসরায়েলপন্থি বিক্ষোভকারীদের মুখোমুখি করে দেয়, যাদের অনেকেই ইহুদি ধর্ম পালন করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও রবিবার এক্সে প্রকাশিত বার্তায় বলেন, “আমেরিকায় যারা হামাস সমর্থক আছেন, তাদের ভিসা এবং/অথবা গ্রিন কার্ড প্রত্যাহার করবে প্রশাসন, যাতে তাদেরকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো যায়।” জানুয়ারিতে ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষমতা গ্রহণের পর এটাই প্রথম ফিলিস্তিনি বিক্ষোভের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জনসম্মুখে প্রকাশিত দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ।
যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৭ সালে হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে। ইসরাইল, মিশর, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাপানও হামাসকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে।
এই প্রতিবেদনের কিছু তথ্য এএফপি ও এপি থেকে নেওয়া হয়েছে।