মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার পুনর্নিরবাচনী প্রচারণায় ইতি টানার পর থেকেই দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অবস্থান রক্ষণাত্মক ও বিরক্তিকর হয়ে ওঠে। তাঁর নতুন প্রতিপক্ষ ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস মঙ্গলবার (১০সেপ্টেম্বর) রাতের জ্বালাময়ী বিতর্কে স্পষ্টভাবে বলেছেন আগামী দুই মাস তিনি ট্রাম্পকে সেখানেই সীমাবদ্ধ রাখতে সচেষ্ট থাকবেন। যদি বিতর্ক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয় তাহলে এ বিতর্কটা তেমন মর্যাদাই পাওয়া উচিত। কিন্তু এত বিভাজিত একটা দেশে তা আদৌ তেমন কিছু হবে কিনা সে প্রশ্নই অতি গুরুত্বপূর্ণ। প্রচারণার শেষ সপ্তাহগুলো এবিসি নিউজের উদ্যোগে জাতীয় সংবিধান কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত ৯০ মিনিটের বিতর্কটির মতোই হাড্ডাহাড্ডি হবে বলে মনে হচ্ছে।। নির্বাচনী জরিপগুলোতে কে জয়ী হতে যাচ্ছেন সে সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো ধারণা উঠে আসছে না।
পুরো জাতি ফলাফল নিয়ে এমনই ধোঁয়াশায় পড়েছে। যদি নির্মম পরিস্থিতি মোকাবেলায় কমলার দক্ষতা নিয়ে কোনো সংশয় থাকে, তাহলে বলতে হয়মঙ্গলবার তাঁর তীক্ষণ ও ধীরস্থির পারফরমেন্সের মাধ্যমে তিনি অন্তত আংশিকভাবে হলেও প্রশ্নটির জবাব দিয়েছেন। কিন্তু পরিস্থিতি বলে, বেঠিক পদক্ষেপ নিলে বা ভুল করলে উভয় প্রার্থীরই টিকে থাকাটা কঠিন হবে। তাকে প্রায় চেনেন না এমন ভোটারদের কাছে নিজেকে তুলে ধরতে কমলাকে বেশ কসরত করতে হয়েছে। বিভিন্ন পলিসির ব্যাপারে নিজের অবস্থা তুলে ধরতে গিয়েও তিনি একই পরিস্থিতিতে পড়েছেন, যদিও বিতর্কে ট্রাম্পকে আক্রমণের বেলায় তিনি ছিলেন বেশ বলিষ্ঠ ও উদ্যমী। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি প্রসিকিউটরের মতো কাজ করেছেন।
ট্রাম্প ওভাল অফিসে ফিরে এলে দেশের ভবিষ্যতের জন্য হুমকি বলে কমলা মন্তব্য করেন। কমলা বলেন, ট্রাম্প যে লোকদের সেবা করতে চান তাদের চেয়ে নিজেকে নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকেন। তিনি ট্রাম্পের ফৌজদারি অপরাধ এবং অভিযোগগুলো সবিস্তারে তুলে ধরেন। এমনকি তিনি ট্রাম্পের সমাবেশে উপস্থিতি নিয়েও ঠাট্টা-বিদ্রুপ করেন। এতে ট্রাম্পের ওপর তাঁর প্রভাববিস্তারের চেষ্টাটি লক্ষণীয় হয়ে ওঠে। ট্রাম্প রাজনৈতিক জীবনে এতটা সরাসরি ও ধারাবাহিকভাবে কখনও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হননি। যদি তিনি তখন বাইডেনের অভাব বোধ করে থাকেন, তাহলে আশ্চর্য হওয়ারও কোনো কারণ নেই।
ট্রাম্প এই কমলার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না, এটা বলা যায়। তিনি আগে কমলাকে ব্যক্তিগতভাবে অপমান করেছিলেন এবং তাঁর বুদ্ধিমত্তা ও পরিচয় নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন। বিতর্কে কোণঠাসা হয়ে পড়লে ট্রাম্প পাল্টা আক্রমণ করতে অভিবাসন ইস্যুটি ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন। তবে তিনি বৃথাই অসংখ্য অবাস্তব ও সরাসরি মিথ্যার আশ্রয় নেন। তিনি যেভাবে নিজেকে সামলে নিয়েছেন, তাতে তাঁর সবচেয়ে অন্ধ সমর্থকরা নিঃসন্দেহে খুশি হবেন। বিশেষত অর্থনীতি, অভিবাসন ও বৈদেশিক নীতি নিয়ে যেভাবে বাইডেন ও কমলাকে আক্রমণকরেছিলেন, তাও তাদের খুশি করবে। তবে নির্বাচিত রিপাবলিকান কয়েকজন কর্মকর্তাসহ অন্যরা দেখতে পাবেন, তিনি কতটা পিছিয়ে ছিলেন। হয়তো ট্রাম্পও সেটা স্বীকার করেছেন। বিতর্কের পর তিনি প্রতিবেদকদের সঙ্গে কথা বলতে নির্দিষ্ট কক্ষে ঢুকে পড়েন, যা সাধারণত দেখা যায় না। অবশ্য এটা সুস্পষ্ট লক্ষন, তিনি বিতর্কের মঞ্চে ব্যর্থ হয়েছেন এবং সেটি প্রতিবেদকদের কাছেভিন্নভাবে তুলে ধরতে চেষ্টা চালিয়েছিলেন। মনে হয়েছে, ট্রাম্প শুধু তাঁর ভক্তদের খুশি করার কৌশল অবলম্বন করেছিলেন। দু’জনের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কতটা সমানে সমান ছিল, তা বিবেচনায় নিলে মনে হচ্ছে, নভেম্বরে জিততে তিনি প্রয়োজনে বাজি ধরবেন।
কমলা তাঁর সমর্থনআরও ভালোভাবে বাড়িয়ে তুলতে সংকটের পর নতুন করে অনেক বেশি উদ্যমী বলে মনে হলো। মুখোমুখি লড়াইয়ে ডেমোক্র্যাটদের শক্তিশালী হিসেবে দেখা হয়। কারণ, তারা ২০২২ সালের মধ্যবর্তী মেয়াদে তা প্রমাণ করেছিল। ভোটজরিণ ও ভবিষ্যদ্বাণীতে যা বলা হয়েছিল, তার চেয়ে তারা অনেক বেশি ভালো করেছিল। তাদের হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবক ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে ভোটারদের উজ্জীবিত করেছিল। কেউ কেউ প্রচার কাজেও নেমেছিলেন এবং অন্যরা বাইরের কোনো গোষ্ঠী বা নিজেদের উদ্যোগে কর্মসূচি নিয়েছিলেন। কিন্তু ট্রাম্প ভোটের বেলায় রিপাবলিকানদের জন্য একজন শক্তিশালী অনুপ্রেরণা দানকারী হিসেবে প্রমাণিত হয়েছেন। ডেমোক্সাটরা জানেন, তাদের ভোটারদের ভোট পেতে হলে তাদের কাজ করতে হবে এবং তারা উদ্বিগ্ন ট্রাম্পের সমর্থকরা নিজেরাই সেখানে সক্রিয় থাকবে। দারুণভাবে সমানে সমান এ নির্বাচনী লড়াইয়ে বিতর্ক, বার্তা, বিজ্ঞাপন, উৎসাহ, প্রার্থীরাকোথায় ও কখন প্রচারণা চালাচ্ছে, তার সবকিছুই গুরুত্বপূর্ণ। কমলা দাবি করেছিলেন, তিনি একজন একজন আন্ডারডগ এবং ২০১৬ সালে ট্রাম্প জিতেছিলেন এ কথা মনে রাখলে কমলার এই অবস্থান ছিল সঠিক। তিনি কিছু প্রমান করতে বিতর্কে নেমেছিলেন এবং এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় মঞ্চে তিনি সেটি করে দেখালেন। কিন্তুতাতে তিনি পার পাবেন বলে মনে হয় না। তাই স্কুলের কোনো সুযোগ নেই তার। ডাম বলছে। ওয়াশিংটন পোস্টের প্রধান প্রতিবেদক, চাবান্তর ইফতেখারুল ইসসাম