হোসনে আরা চৌধুরী
নিউ ইয়র্ক রাজনীতিতে বড় চমক— গভর্নর ক্যাথি হচুল আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছেন যে তিনি কুইন্সের এসেম্বলিমেম্বার জোহারান মামদানীকে মেয়র পদে সমর্থন করছেন। এই সিদ্ধান্ত কেবল মামদানীর রাজনৈতিক পথকে মজবুত করছে না, বরং হচুলের নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের সঙ্গেও গভীরভাবে জড়িয়ে আছে।
গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে হচুল বলেন, “আমাদের মধ্যে কিছু মতভেদ থাকলেও বৃহত্তর স্বার্থে— বিশেষ করে বাসস্থান, বাজেট ও জনগণের জীবনমান— আমরা একই লক্ষ্যে কাজ করতে চাই।” এই বার্তা সরাসরি নিউইয়র্ক সিটির প্রগ্রেসিভ ভোটারদের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ২০২২ সালের গভর্নর নির্বাচনে হচুল শহরের ভেতরে প্রত্যাশিত সমর্থন পাননি। বিশেষত তরুণ ও প্রগ্রেসিভ ভোটাররা তার প্রতি আস্থা রাখতে দ্বিধা করেছিলেন। এবার মামদানীর মতো এক দৃঢ় প্রগ্রেসিভ নেতাকে সমর্থন করে হচুল সেই দূরত্ব কমাতে চাইছেন। একইসাথে ২০২৬ সালের গভর্নর নির্বাচনে তিনি যে আরেকটি মেয়াদে দৌড়াবেন— সেই প্রস্তুতির কৌশল হিসেবেও এই পদক্ষেপকে দেখা হচ্ছে।
অন্যদিকে, জোহারান মামদানী নিউইয়র্কের রাজনৈতিক মঞ্চে তুলনামূলক নতুন হলেও ইতিমধ্যেই প্রগতিশীল রাজনীতির অন্যতম কণ্ঠ হয়ে উঠেছেন। আবাসন সংকট, ভাড়া নিয়ন্ত্রণ, গণপরিবহন উন্নয়ন এবং অভিবাসী অধিকারের পক্ষে তার সোচ্চার ভূমিকা তাকে তরুণ ভোটারদের মাঝে জনপ্রিয় করেছে। হচুলের সমর্থন পেয়ে তিনি বলেন, “যদি আমি নির্বাচিত হই, গভর্নরের সঙ্গে একসাথে কাজ করব শহরের নিরাপত্তা ও জনগণের অধিকার রক্ষায়।”
তবে রিপাবলিকান নেতারা এই সমর্থনকে কড়া সমালোচনা করেছেন। তাদের অভিযোগ, হচুল রাজনীতিতে আরও বেশি বামঘেঁষা অবস্থান নিচ্ছেন যা শহরের আইনশৃঙ্খলা ও ব্যবসাবান্ধব নীতির জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সমালোচনা গভর্নরকে কিছুটা চাপের মুখে ফেলতে পারে, তবে নিউইয়র্কের রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রগ্রেসিভ ভোটারদের সমর্থন পাওয়া দীর্ঘমেয়াদে অনেক বেশি কার্যকর হতে পারে। হচুলের এই ঘোষণা শুধু নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচন নয়, বরং রাজ্যজুড়ে রাজনৈতিক অঙ্ক নতুনভাবে সাজিয়ে দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। একদিকে মামদানী মেয়র নির্বাচনে শক্ত অবস্থানে দাঁড়াবেন, অন্যদিকে হচুল নিজেকে প্রগ্রেসিভ ভোটারদের কাছে একজন কৌশলী সহযোগী হিসেবে তুলে ধরবেন।
শেষ কথা: নিউইয়র্ক রাজনীতিতে এই সমর্থন নিঃসন্দেহে এক টার্নিং পয়েন্ট। মামদানী যদি জয়ী হন, তবে তিনি সিটি হল থেকে সরাসরি গভর্নরের সঙ্গে কাজ করবেন। আর হচুলের জন্য এটি হবে ২০২৬ সালের নির্বাচনে রাজনৈতিক অবস্থান সুদৃঢ় করার এক শক্ত ভিত।