ব্রিটিশ নগরবিষয়ক মন্ত্রী (সিটি মিনিস্টার) হচ্ছেন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক। এর মাধ্যমে প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভ‚ত হিসেবে যুক্তরাজ্যের নতুন সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য হচ্ছেন টিউলিপ সিদ্দিক। প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমার তাকে আর্থিক সেবা খাত নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দিচ্ছেন। গতকাল মঙ্গলবার বøæমবার্গ নিউজের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর প্রকাশ করে।
এ খবরে দেশটিতে বসবাসকারী বাঙালিরাও বেশ উচ্ছ¡সিত বলে জানা গেছে।
লেবার পার্টি থেকে চতুর্থ বারের মতো যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হওয়া টিউলিপ সিদ্দিককে (৪১) ‘মিনিস্টার ফর ফাইন্যান্স সিটি’ করা হচ্ছে। তিনি যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে আর্থিক সেবা খাতের নিয়ন্ত্রকের ভ‚মিকায় থাকবেন। যুক্তরাজ্যের আর্থিক সেবা খাতের নীতি নির্ধারণীতে নেতৃত্ব দেবেন তিনি। অর্থনৈতিক খাতের প্রযুক্তি ও ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ন্ত্রণ এবং ঋণব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত নীতিনির্ধারণের দায়িত্বও থাকবে তার হাতে। লেবার পার্টি বিরোধী দলে থাকাকালীন সিদ্দিক এই পদে ছায়ামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। টিউলিপ সিদ্দিক আগের কনজারভেটিভ সরকারের অধীনে এইচএসবিসির সাবেক ব্যাংকার বিম আফোলামির স্থলাভিষিক্ত হবেন।
যদিও গতকাল রাতে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমারের সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে অবগত সূত্রের বরাত দিয়ে বøæমবার্গ জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী স্টারমার তাকে এই পদে নিয়োগ দিচ্ছেন। গত মে মাসে টিউলিপ সিদ্দিক ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছিলেন, লেবার পার্টি ক্ষমতায় এলে আর্থিক খাতে প্রতিযোগিতা ও প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর ক্ষেত্রে যেসব বাধা রয়েছে, সেগুলো অপসারণের উদ্যোগ নেওয়া হবে। নতুন সরকারের অর্থমন্ত্রী র?্যাচেল রিভস গত সোমবার দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে এগিয়ে নেওয়া, আবাসন নির্মাণ বৃদ্ধি, অবকাঠামো প্রকল্পগুলোর বাধা দূর করা এবং বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্যের নতুন একটি ‘জাতীয় মিশন’ চালু করেছেন। টিউলিপ সিদ্দিক ২০১৬ সাল থেকে লেবার পার্টির হয়ে ছায়া শিক্ষামন্ত্রী, সর্বদলীয় পার্লামেন্টারি গ্রæপের ভাইস চেয়ার, নারী ও সমতা নির্বাচন কমিটির সদস্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও পালন করেছেন।
উইকিপিডিয়া সূত্রে জানা যায়, শেখ রেহানা ও শফিক সিদ্দিকের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক ১৯৮২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর লন্ডনে জš§গ্রহণ করেন। তিনি একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভ‚ত ব্রিটিশ লেবার পার্টির রাজনীতিবিদ। তিনি ২০১৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে লন্ডনের হ্যামস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসন থেকে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগে তিনি রিজেন্ট পার্কের কাউন্সিলর এবং ২০১০ সালে ক্যামডেন কাউন্সিলের কালচার অ্যান্ড কমিউনিটির সদস্য ছিলেন। লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে পলিটিক্স, পলিসি ও গভর্নমেন্ট বিষয়ে তার স্নাতকোত্তর ডিগ্রি রয়েছে। মাত্র ১৬ বছর বয়সে লেবার পার্টির সদস্য হওয়া টিউলিপ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল গ্রেটার লন্ডন অথরিটি এবং সেইভ দ্য চিলড্রেনের সঙ্গেও কাজ করেছেন। ২০১০ সালে ক্যামডেন কাউন্সিলে প্রথম বাঙালি নারী কাউন্সিলর নির্বাচিত হন তিনি।
গত ৪ জুলাইয়ের নির্বাচনে লন্ডনের হ্যামস্টেড ও হাইগেট আসন থেকে ২৩ হাজার ৪৩২ ভোট পেয়ে টানা চতুর্থ বারের মতো এমপি নির্বাচিত হন তিনি। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী কনজারভেটিভ পার্টির ডন উইলিয়ামস পান মাত্র ৮ হাজার ৪৬২ ভোট। এর আগে হ্যামস্টেড ও কিলবার্ন আসনে টানা তিন বার এমপি হয়েছিলেন তিনি। ২০১৫ সালে তিনি প্রথম যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন। কনজারভেটিভ পার্টির একসময়ের নিরাপদ এই আসন লেবার পার্টিকে উপহার দিয়ে তিনি এখন আসনটিকে লেবার পার্টির নিরাপদ আসনে পরিণত করেছেন।
ব্রিটেনের বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. শফিক সিদ্দিক ও শেখ রেহানা দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে ব্রিটেনের রয়েল সোসাইটি অব আর্টসের ফেলো টিউলিপ দ্বিতীয়। জয়ের পর টিউলিপ সিদ্দিক বলেন, ‘সবাইকে শুভেচ্ছা জানাই। আপনাদের দোয়ায় চতুর্থ বারের মতো আমি নির্বাচিত হলাম। বাংলাদেশি কমিউনিটি সব সময় আমাকে সমর্থন করে। আমি তাদের প্রতি খুবই কৃতজ্ঞ যে, তারা এবারও আমাকে সমর্থন দিয়েছেন।’ নির্বাচনের পর শেখ রেহানা নিজের কন্যা এমপি টিউলিপ সিদ্দিককে নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘আমার মেয়ে রাজনীতিতে তার জীবনটাকে উৎসর্গ করেছে। মানুষের সেবায় সে নিষ্ঠার সঙ্গে তার দায়িত্ব পালন করবে। সবার কাছে তার জন্য দোয়া চাই।’